২০ লাখ টাকায় চলচ্চিত্র, যেমন কাজ তেমন ফল

শাপলা মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল থেকে একশ’ ছবি ঘোষণা দেওয়ায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে কর্মচাঞ্চল্য আবার ফিরে এসেছে। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেছেন, টাকা কোথা থেকে কিভাবে আসছে সেসব খোঁজ নেওয়ার আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। এই নিয়ে আমাদের মাথাব্যথাও নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি টাকাটা চলচ্চিত্রশিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে এবং একসঙ্গে অনেকগুলো ছবির কাজ শুরু হওয়ার কারণে শিল্পী, কলা-কুশলীরা কাজে ব্যস্ত হতে পারছেন।
কোভিড মহামারীর কারণে চলচ্চিত্রশিল্প ঝিমিয়ে পড়েছিল। এই ছবিগুলো সেই ঝিমুনি ভাবটা কাটিয়ে চলচ্চিত্রকে অনেকটাই সচল করেছে। তারপরেও এফডিসি শুটিং শূন্য। কোনো নির্মাতা এখন আর এফডিসি বা কবীরপুরকেও চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য লোকেশন হিসেবে ব্যবহার করতে চান না। কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৮৩ ছবির নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘এখন প্রদর্শন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে প্রযোজকরা ছবির বাজেট কমিয়ে আনতে চান। সবাই চান ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ছবির কাজ শেষ করে ফেলতে। এফডিসিতে শুটিং করতে অনেক টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া লোকেশন বৈচিত্র্যও প্রয়োজন হয় ছবির জন্য। সেই বৈচিত্র্যতো ঘেরাটোপের মধ্যে হয় না।’ দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ২০ লাখ টাকা বাজেটে কি ছবি নির্মাণ করেছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কেন আমার আকাশ মহল ছবির বাজেট আরো কম।’ তুমি আছ তুমি নেই ছবিটিও একই বাজেটে নির্মাণ করেছেন তিনি। একশ’ ছবির মধ্যে তিনিও একটি ছবি নির্মাণ করবেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন, ছবিগুলো হবে যেমন গুড় তেমন মিষ্টি। এসব ছবির দৈর্ঘ হবে ৯০ থেকে ১০০ মিনিটের মধ্যে এবং গান থাকবে ১ থেকে দুটি। সুতরাং নির্মাণ ব্যয় এখানেও কমে এসেছে একটি উল্লোখযোগ্য অংকের টাকা।
একশ’ ছবি নিয়ে বলা যায়, এই ছবিগুলোর জন্য বাজেট ২০ লাখ টাকা ঘোষণা করা হলেও আসলে কি ২০ লাখ টাকায় ছবিগুলো নির্মাণ করছে কোটি টাকা বাজেটে ছবির নির্মাতা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালক সেলিম আজম বলেন, আসলে বিষয়টা এতো সহজ নয়। প্রকাশ্যে ২০ লাখ টাকা বলা হলেও আসলে কি ২০ লাখ টাকায় ছবি হচ্ছে? এই বাজেটে একটি ছবি নির্মাণের জন্য লোকেশন ব্যয়, চা-নাশতা-খাওয়া, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং ছবির সকল অনুষঙ্গ ব্যয় বহন করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তাহলে ছবির নির্মাণ ব্যয় ২০ লাখ টাকায় থাকলো কোথায়। এখানে আরও একটি সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। সেটা হলো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি শিল্পীদের সঙ্গে প্যাকেজ ডিল করাতে শিল্পীদের পারিশ্রমিকও তুলনামূলকভাবে কমে আসছে। এতে প্রযোজকের আরও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এ কথাটি শুধু শাপলা মিডিয়ার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। যারা এই বাজেটে ছবি নির্মাণ করছেন তারাও একই সমীকরণে কাজ করছেন।
বর্তমানে ১৪টি ছবির শুটিং চলছে। পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ‘যাও পাখি বল তারে’ ছবির ইউনিট নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা ফিরেছেন। তিনি বগুড়ায় দুই সপ্তাহ এই ছবিটির শুটিং করেছেন। তার পরদিন রোববার সন্ধ্যায় পরিচালক সৈকত নাসির ‘মাসুদ রানা’ ছবির ইউনিট নিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় গেছেন। সেখানে তিনি বেশ কয়েকদিন থাকবেন। এছাড়া গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং মাদারিপুর এলাকায় চোখ, যন্ত্রণা, বাংলার দর্পণ ছবির শুটিং চলছে। শাপলা মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের প্রযোজনা ও পরিবেশনায় আরো দশটি ছবির শুটিং চলছে উত্তরা, দিয়া বাড়ি, পূবাইল এবং ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় শুটিং হচ্ছে। এই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে চৈত্র দুপুর, এক পশলা বৃষ্টি, মন যারে চায়, পরাণে পরাণ বাধি, কলিজাতে দাগ লেগেছে, হৃদ মাঝারে তুমি, জেদী মেয়ে, বাসর ঘর, ফেসবুক ও দুই ঘন্টা দশ মিনিট।
ইতোমধ্যে ঘোষিত এই একশ’ ছবির দ্বিতীয় গ্রুপের দশটি ছবির নির্মাতারা শুটিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এছাড়াও ডিপজলের সাভারের ফাইম ষ্টুডিওতে মনতাজুর রহমান আকবরের দুটি ছবির শুটিং চলছে। অর্থাৎ একটি ছবির কাজ শেষ করে আরেকটি ছবির কাজ শুরু হয়ে গেছে। রকিবুল ইসলাম রাকিবও ইতোমধ্যে একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ছবি কি সিনেমা হলের জন্য নির্মিত হচ্ছে? এখানে যে ছবিগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে তিন থেকে চারটি ছবি সিনেমা হলে যাবে। কারণ সেই ছবিগুলো কোটি টাকা বাজেটের। অন্য ছবিগুলোর প্রায় সবই অ্যাপস বা টেলিভিশনে সম্প্রচার হবে। এজন্য এসব ছবিতে বাণিজ্যিক তারকা বা চেনামুখের নায়ক-নায়িকার প্রয়োজন হচ্ছে না। মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপনচিত্র বা নাটকের অবহেলিতরা এসব ছবিতে এসে ভীড় জমিয়েছে। এছাড়া চলচ্চিত্রে অনেক দিন থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সুযোগের অভাবে নিজেদের বিকশিত করতে পারছিলেন না, এমন অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা এসব ছবির সুবাদে ক্যারিয়ারের স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *