আমেরিকার অভিবাসন সবসময়ই রাজনীতিনিয়ন্ত্রিত, বললেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন বিশেষজ্ঞ

টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ইমিগ্রেশন বিষয়ক গবেষক ড. মেহনাজ মোমেন এবং নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন এটর্নি মৌমিতা রহমান এই মতামত দিয়েছেন। তারা ইমিগ্রেশনকে অর্থনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে ঢেলে সাজনোর পরামর্শ দিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, বাইডেনের সংস্কার উদ্যোগ প্রক্রিয়াটিকে সহজ করবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে আলোচনায় তারা বলেন, বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে ইমিগ্রেশন নীতি প্রণীত হয়। আমেরিকায় তা না হওয়ায় দেশটিতে সুষম একটি অভিবাসন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠেনি। তাদের প্রত্যাশা, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত সংস্কার উদ্যোগ আমেরিকার অভিবাসনকে খানিকটা হলেও সহজ করবে।
ড. মেহনাজ মোমেন বলেন, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের অংশ হিসেবে অভিবাসন নীতিমালা সাজানো হয়। কিন্তু আমেরিকায় অভিবাসনকে রাজনীতির একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, দুই দশকে আমেরিকায় অভিবাসন একটি সাংস্কৃতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। অভিবাসীদের পছন্দ করা বা না করাকে কেন্দ্র করে নতুন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, পরিপূর্ণভাবে এই প্রস্তাবনাকে আইনে পরিণত করতে দুই কক্ষেই এটি পাশ হতে হবে। সেক্ষেত্রে সিনেটে রিপাবলিকানদের বাধার মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আলাদা আলাদা পদক্ষেপ হিসেবে তার পরিকল্পনা কার্যকর করতে চান। সেটি করতে হয়েতো বা তাকে বেগ পেতে হবে না। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার অভিবাসন সংস্কার প্রস্তাবনায় ‘আনডকুমেন্টেড’ শব্দের বদলে ‘নন সিটিজেন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এটি কিন্তু তার নীতিমালার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঈঙ্গিত। অভিবাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রশাসনের জন্য এই বার্তাটি অনেক প্রশাসনিক ইন্টারপ্রিটেশনকে বদলে দেবে।

তিনি বলেন,আমেরিকার অভিবাসন দক্ষ জনশক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও অদক্ষদের বেলায় খুবই রুঢ়। আবার অর্থনীতির প্রয়োজনেই প্রতিবেশি দেশ থেকে লোক আসার পথ বন্ধ করেও দেয় না। এই সব কারনেই আমেরিকায় ’আনডকুমেন্টেড’ জনগোষ্ঠী এতো বেশি।
মৌমিতা রহমান বলেন, অভিবাসন সংক্রান্ত প্রতিটি আইনই হয়েছে রাজনীতির কারণে। অপছন্দের লোকদের আমেরিকার বাইরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই দেশটির অভিবাসন নীতি ও কাঠামো সাজানো হয়। দেশটিতে সবসময়ই অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ছিলো, গত চার বছরে তা অনেক বেড়েছে। এ কারণে এই সময়ে বিশ্বের অনেক দেশে আমেরিকার কনস্যুলার সেবা, ভিসা দেয়া সংক্রান্ত কাজ কর্ম গুটিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় লোক আসা নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাম্প প্রশাসন এসব করেছে।
তিনি বলেন, বাইডেনের প্রস্তাবনায় অবৈধদের বৈধতা পাওয়ার আবেদন করার ক্ষেত্রে কঠিন কোনো পূর্ব শর্ত রাখা হয়নি। অভিবাসীদের প্রতি প্রেসিডেন্টের মনোভাব সামগ্রিকভাবে অভিবাসন সংক্রান্ত কাজে প্রভাব ফেলে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে যেহেতু নিজেকে অভিবাসী বান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার একটি ইতিবাচক ছাপ পরবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় টরন্টো সময় বুধবার রাতে সরাসরি আলোচনাটি সম্প্রচারিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *