রাষ্ট্রীয় ভিভিআইপিদের জন্যে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক নৌযান ‘পরিদর্শী’
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর জন্য জলপথে চলাচলের উপযোগী আধুনিক কোনো জলযান নেই দেশে। এ জন্য নির্ভর করতে হয় নৌবাহিনী কিংবা কোস্টগার্ডের জাহাজের ওপর। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই অভাব দূর হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিলাশবহুল ও অত্যাধুনিক একটি নৌযান। জাহাজটির নাম রাখা হয়েছে ‘পরিদর্শী’।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) দেশের রাষ্ট্রীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ (ভিভিআইপি) ব্যক্তিদের জন্য এই জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে। চট্টগ্রামের এফএমসি ডকইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে এই জাহাজটি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শেষ দিকে অত্যাধুনিক এই জাহাজটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ইয়াসিন চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য নৌপথে চলাচলের জন্য অত্যাধুনিক এই জাহাজটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়। দুইবার নকশা পরিবর্তন শেষে ২০১৮ সালে আমরা এর নির্মাণকাজ শুরু করি। মাত্র দুই বছরেই জাহাজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর জাহাজটি বিআইডাব্লিউটিএ’র কাছে হস্তান্তর করা হবে। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি জাহাজটি উদ্বোধন করবেন।
প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ইয়াসিন চৌধুরী আরো বলেন, এই জাহাজটি হাইটেক এবং মাল্টি পারপাস ভ্যাসেল। রাষ্ট্রীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ (ভিভিআইপি) ব্যক্তিদের পরিবহনের পাশাপাশি প্রয়োজনে সার্ভে জাহাজ হিসেবেও এই জাহাজকে ব্যবহার করা যাবে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ইতিহাসে এটাই প্রথম হাইটেক ক্যাটামারান টাইপ সবচেয়ে বড় জাহাজ। যাত্রী পরিবহণের জন্য ক্যাটামারান টাইপ আরো কয়েকটি জাহাজ দেশে থাকলেও এমন অত্যাধুনিক এবং বড় আকারের জাহাজ দেশে নেই। এই জাহাজে বসেই নদী কিংবা সাগরের তলদেশ (৫০০ মিটার) পর্যবেক্ষণ করা যাবে সহজেই। এজন্য এই জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে মাল্টিবিম ইকো সাউন্ডার। ভিভিআইপি ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগব্যবস্থার জন্য এসএসবি (সিঙ্গেল সাইড ব্যান্ড রেডিও) রয়েছে এই জাহাজে। নদী কিংবা সাগরের স্রোত মাপার জন্য রয়েছে কারেন্ট মিটার। এসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সাধারণত যাত্রীবাহী জাহাজে থাকে না।
এফএমসি শিপইয়ার্ডের উপ মহাব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন) মাহমুদুল হাসান জানান, ৪৯ দশমিক ৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজটি প্রস্থে ১২ মিটার। গভিরতা ৩ দশমিক ৫ মিটার। নদীপথে চলাচলের পাশাপাশি সাগরে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরুত্বেও চলাচল করতে সক্ষম এই জাহাজ।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলাচল করবে সরকারি এই জাহাজ। রাষ্ট্রীয় অতিগুরুত্বপূর্ণ (ভিভিআইপি) ব্যক্তিদের কাজের সুবিধার্থে ১৮ আসন বিশিষ্ট মিটিং রুম এবং ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম রয়েছে এতে। অত্যাধুনিক রান্নাঘরের পাশাপাশি অতিথিদের একসাথে আপ্যায়নের জন্য জাহাজে রয়েছে সুবিশাল ডাইনিং রুম।
কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘পরিদর্শী’ নামের এই জাহাজটিতে রয়েছে ২৪টি কক্ষ। এই মধ্যে ২টি প্রেসিডেন্ট স্যুট। অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিল সিটের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক এই জাহাজ। ওজনে হালকা করার জন্য জাহাজটির উপরিভাগে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম সিট। বিশ্বের আধুনিক যাত্রীবাহী জাহাজের আদলে এতে সংযোজন করা হয়েছে ডিজিপিএস এবং জিপিএস ব্যবস্থা। এছাড়াও রয়েছে ভিএসএফ সেট, রাডার, নেভিগেশনাল ইকো সাউন্ডার, টেলিগ্রাফ এবং অটোমেটিক টেলিফোন। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ইন্টারনেটের জন্য ওয়াইফাই ব্যবস্থাও রয়েছে পুরো জাহাজে। নিরাপত্তার জন্য এই জাহাজে সংযুক্ত রয়েছে একটি হাইস্পিড বোট।
জাহাজটির নির্মাণ কাজ তদারকি করেছে যুক্তরাজ্যের শিপ সার্ভে প্রতিষ্ঠান (ক্লাস) এলআর। জার্মানির তৈরি দুটি ৯০০ অশ্ব শক্তির ইঞ্জিন এবং দুটি ৩৫০ কিলোওয়াটের জেনারেটর রয়েছে জাহাজটিতে। জাহাজটির প্রপেলার আনা হয়েছে যুক্তরাজ্যের বিটি মেরিন কম্পানি থেকে। এর ইন্টেরিয়র সাজানো হয়েছে ফায়ারপ্রুফ আসবাবপত্র দিয়ে।